ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাসকেড পর্বতমালার হ্যাট ক্রিক অবজারভেটরিতে রয়েছে অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে (ATA)। এটি বহির্জাগতিক জীবনের সন্ধানে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্র। সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৩০০ মাইল উত্তরে, ল্যাসেন পিকের কাছে এটি অবস্থিত।
এই কেন্দ্রটি একই সঙ্গে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান প্রাণীর অনুসন্ধানে পরিচালিত SETI (Search for Extraterrestrial Intelligence) প্রকল্পে কাজ করে। ATA-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি একই সময়ে বিশাল আকাশ এলাকা এবং বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি স্ক্যান করতে পারে। এটি গবেষকদের জন্য এক অসাধারণ সুবিধা।
বর্তমানে ATA-তে ৪২টি ডিশ অ্যান্টেনা আছে। প্রতিটি ডিশের ব্যাস ৬.১ মিটার। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা ৩৫০-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সব অ্যান্টেনা চালু হলে প্রায় এক হেক্টর জায়গা জুড়ে এটি কাজ করবে।
প্রতিটি ডিশ অফসেট গ্রেগোরিয়ান নকশায় তৈরি। এই নকশার কারণে অপ্রয়োজনীয় সংকেত কমে যায় এবং ডেটা আরও পরিষ্কার হয়। এই প্রযুক্তি ১ থেকে ১৪ গিগাহার্জ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এটি একই সময়ে একাধিক গবেষককে বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
ATA-এর একটি বড় অবদান হলো এর দীর্ঘমেয়াদী SETI গবেষণা। অন্যান্য রেডিও টেলিস্কোপ যেখানে সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেখানে ATA প্রায় পুরোটা সময় ভিনগ্রহী সভ্যতার সম্ভাব্য সংকেত খোঁজে। গবেষকরা বিশেষ করে নাসার কেপলার মিশনে আবিষ্কৃত গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। এই গ্রহগুলো তথাকথিত “হ্যাবিটেবল জোন”-এ অবস্থিত। এছাড়াও, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ঘন কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং এক হাজার আলোকবর্ষ দূরের সম্ভাব্য বাসযোগ্য নক্ষত্র বা “হ্যাব স্টারস”-এর উপরও রাখা হচ্ছে বিশেষ নজর।
ATA এর আগেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যুক্ত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু ওউমুয়ামুয়া থেকে সংকেত খোঁজা। এটি ১৯৭৭ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির টেলিস্কোপে ধরা পড়া বিখ্যাত “WOW সিগনাল”-এর দিকেও নজর রেখেছিল।
এটি দীর্ঘমেয়াদী SETI প্রজেক্ট ফিনিক্সের কাজকেও সমর্থন করেছে। এই গবেষণাগুলো ভিনগ্রহী জীবনের অনুসন্ধানকে কেবল কল্পনা থেকে বৈজ্ঞানিক আলোচনার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
২০২০ সাল থেকে ATA-তে নতুন প্রজন্মের রিসিভার বসানোর কাজ চলছে। এই নতুন রিসিভারগুলো আরও সংবেদনশীল এবং বিস্তৃত ফ্রিকোয়েন্সি কভার করতে পারে। এই আপগ্রেডের ফলে গবেষণার পরিধি আরও বাড়বে। একই সঙ্গে এই উন্নয়ণ বিশ্বজুড়ে গবেষকদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে। নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকরা এখনই এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে মহাবিশ্ব অনুসন্ধানে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞান দিয়ে ভিনগ্রহী জীবনের খোঁজ একটি পুরোনো ধারণা হলেও, ATA এটিকে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও কার্যকর করেছে।
গবেষকরা আশাবাদী, আগামী দশকে এটি SETI গবেষণার প্রধান অবলম্বন হবে। হয়তো একদিন মানবজাতি মহাবিশ্বের অন্য কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাবে।


