চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এই খাতে চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে ঢাকা। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ সহায়তা দিতে বেইজিং ইতিবাচক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বৈঠক সূত্র জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের পর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পও আলোচ্যসূচিতে ছিল।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই)য়ো যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে আগেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চীন। বৈঠকে জিজিআই ও চীনের আগ্রহের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ওপর পৌঁছেছে। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে চীনে। এই প্রকল্পে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চীন কাজ করছে।
চলতি বছরের শেষের দিকে প্রকল্প যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছে একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। এ তথ্যও রাষ্ট্রদূত বৈঠকে জানিয়েছেন।
প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের পর অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করে। মে মাসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঋণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনকে অবহিত করে। জুলাইয়ে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছে ৫৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই প্রকল্পের আর্থিক চুক্তি সই করতে আগ্রহী ঢাকা।
তিস্তা মহাপরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৫৫ কোটি ডলার চীনের ঋণ, বাকিটা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন। প্রকল্পের কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালে এবং শেষ হবে ২০২৯ সালে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অতীতে চীন ও ভারতের আগ্রহ ছিল। ২০২৪ সালের মে মাসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফরে এসে তিস্তা প্রকল্পে ভারতের বিনিয়োগ আগ্রহের কথা জানিয়ে ছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীও চেয়েছিলেন প্রকল্পে ভারতীয় অংশগ্রহণ থাকুক। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলে ভারত এই প্রকল্প থেকে সরে আসে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পূর্বে জানিয়েছিলেন, প্রকল্প কাকে দিয়ে বাস্তবায়ন হবে তা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ। চীনের পক্ষ থেকে সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে।
তিস্তা প্রকল্প কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর উৎপত্তিস্থল চীনে অবস্থিত। সেখানে চীনের বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। তাই তিস্তার মতো কৌশলগত প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্টতা নদীর পানি প্রবাহ স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে।


