ডাকসু জাকসু নির্বাচন ২০২৫-এ অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের পর পুনর্গঠনের পথে হাঁটছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে হারার পর সংগঠনটি মনোযোগ দিচ্ছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভালো করার দিকে। এরই মধ্যে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্রদলের সূত্র জানায়, খুব শিগগিরই সারাদেশের জেলা ও উপজেলায় সাংগঠনিক সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ জন্য ৩৮টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে, যারা প্রতিটি জেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবে। সংগঠনের প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে অপ্রস্তুত অবস্থায় অংশ নেওয়াই মূলত ছাত্রদলের বড় ভুল ছিল। এতে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ে এবং বিএনপির মধ্যেও চাপ তৈরি হয়।
নির্বাচন-পরবর্তী বৈঠকগুলোতে ছাত্রদলের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে প্রশ্ন তুলেছেন প্রস্তুতির অভাব নিয়ে। অভিযোগ করা হয়, যেখানে প্রতিপক্ষ সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয় এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে, সেখানে ছাত্রদল মাত্র ১৬ দিনের প্রস্তুতিতে নির্বাচনী মাঠে নামে। বিএনপির পক্ষ থেকেও যথেষ্ট সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
বৈঠকে ছাত্রদলের নেতারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৭ বছর অনুপস্থিত থাকার কারণে সংগঠনটি কার্যত ছাত্রসমাজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের পরও ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে না পারা ছিল বড় কৌশলগত ভুল। এছাড়া শিক্ষকদের সমন্বয়, নির্বাচন মনিটরিং এবং আর্থিক সহায়তায় ঘাটতি ছিল বলেও স্বীকার করেন নেতারা।
নির্বাচনে পরাজয়ের পর অভ্যন্তরীণ দোষারোপও তীব্র হয়েছে। একাংশ কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই সঙ্গে শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত সাদা দলের কিছু শিক্ষক দাবি করেছেন, ছাত্রদলের সহাবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের পুরোপুরি সহায়তা করা সম্ভব হয়নি।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতারা মনে করছেন, এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য। সাংগঠনিক সফর, নতুন কমিটি গঠন এবং পদপ্রত্যাশী নেতাদের তৎপরতা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ভালো ফল করতে হলে মাঠপর্যায়ে সক্রিয়তা, আর্থিক শক্তি ও শিক্ষক–শিক্ষার্থী সমন্বয়ের ওপর জোর দিচ্ছে সংগঠনটি।


