যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের সমাধান নিয়ে যে আলোচনা হবে, তাতে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে আগামী সপ্তাহে যে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে দেখার সুযোগ হবে যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তির জন্য কতটা আগ্রহী এবং আন্তরিক।
সৌদি আরবে আগামী কিছুদিনের মধ্যে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি আলোচনা হতে যাচ্ছে। সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুবিও জানান, এখনো প্রকৃত আলোচনা শুরু হয়নি, তবে যদি আলোচনা এগিয়ে যায়, তাহলে ইউক্রেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও এতে অংশগ্রহণ করবে।
রয়টার্সের জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে একটি প্রশ্নমালা পাঠিয়েছেন, যাতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে কোনো শান্তি চুক্তি হলে তা বাস্তবায়নে তারা কি পরিমাণ সেনা পাঠাতে প্রস্তুত আছেন।
রুবিও সিবিএসে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন, এবং পুতিন শান্তির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্টও আশা করছেন যে, এই সংঘাত এমনভাবে শেষ হবে যা ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষা করবে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন অবশ্যই এই আগ্রহকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। তাই পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ এবং দিনগুলোই এটা স্পষ্ট করবে, পুতিনের শান্তির ইচ্ছা আসল কিনা।”
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ রোববার সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন বলে উইটকফ ফক্স নিউজ সাক্ষাৎকারে জানান। রুবিওও সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, কারণ তার সফর আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
এই শান্তি আলোচনা ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রশ্ন তুলেছেন, রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় খনিজ সম্পদ পুতিনকে দেওয়া হবে কিনা।
রুবিও এবং উইটকফ কেলগগের মন্তব্যের পর ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর আলোচনায় না থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। উইটকফ ফক্স নিউজে জানান, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিভিন্ন মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ট্রাম্পও গত সপ্তাহে জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন।
রুবিও বলেন, প্রকৃত আলোচনায় ইউক্রেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো অবশ্যই থাকবে। তিনি বলেন, ”ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, কারণ তারা আক্রমণের শিকার, এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, কারণ তারা পুতিন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি, তবে যদি আলোচনা শুরু হয়, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে অবশ্যই এতে অংশ নিতে হবে।”
এদিকে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সোমবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের জন্য একটি জরুরি সম্মেলন আয়োজন করবেন বলে ম্যাক্রোঁর অফিস জানিয়েছে। এটি কেলগগের মন্তব্যের পরপরই আয়োজন করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত পদক্ষেপে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়েছেন। তারা আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সুরক্ষায় নির্ভরশীল হতে পারছেন না এবং ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে এমন চুক্তি করতে পারেন যা ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন।
শনিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে ফোনালাপে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রুবিও বলেন, “কোনো বিস্তারিত আলোচনা করেননি।” তবে মস্কো জানিয়েছে যে, তারা “পূর্ববর্তী যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ওপর আরোপিত একতরফা বাধাগুলি” তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে।
রুবিও বলেন, তিনি মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের “জটিল” কার্যক্রম পরিস্থিতি ল্যাভরভের কাছে তুলে ধরেছিলেন এবং আরও বলেন, “যদি ইউক্রেন শান্তির জন্য কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়, তবে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।”