অস্ট্রেলিয়ায় সানস্ক্রিন নিয়ে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাজার থেকে ১৮টি পণ্য প্রত্যাহার বা বিক্রি স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাজারের জনপ্রিয় ও দামি অনেক সানস্ক্রিনই লেবেলে দাবিকৃত সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর (SPF) দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিশ্বে ত্বকের ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি অস্ট্রেলিয়ায়। অনুমান করা হয়, দেশটির প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজনের জীবনকালে অন্তত একবার স্কিন ক্যানসার (Skin Cancer)-এর কারণে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে। এজন্যই এখানে সানস্ক্রিন নিয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে এই কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয়। একটি ভোক্তা অধিকার সংগঠনের বিশ্লেষণে ধরা পড়ে যে কয়েকটি সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা নির্মাতাদের দাবির তুলনায় অনেক কম। এর মধ্যে আল্ট্রা ভায়োলেটের (Ultra Violette) লিন স্ক্রিন স্কিনস্ক্রিন (Lean Screen Skinscreen)-এর লেবেলে এসপিএফ৫০+ লেখা থাকলেও পরীক্ষায় এর কার্যকারিতা পাওয়া যায় মাত্র এসপিএফ৪। আগস্টে কোম্পানিটি স্বেচ্ছায় পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেয়।
ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Therapeutic Goods Administration – TGA) জানিয়েছে, একই বেস ফর্মুলা ব্যবহার করা অন্তত আরও ২০টি সানস্ক্রিন নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এগুলোর প্রকৃত SPF ২১-এর বেশি নয়, আর কিছু ক্ষেত্রে তা নেমে আসতে পারে মাত্র এসপিএফ-এ।
TGA এখন পর্যন্ত ২১টি পণ্যের নাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ৮টি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়েছে বা উৎপাদন বন্ধ, ১০টির বিক্রি সাময়িকভাবে স্থগিত, আর ২টির পর্যালোচনা চলছে। একটি পণ্য অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি হলেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়নি।
এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি সাধারণ বেস ফর্মুলা, যা তৈরি করেছিল ওয়াইল্ড চাইল্ড ল্যাবরেটরিজ (Wild Child Laboratories Pty Ltd)। সংস্থাটি ইতোমধ্যেই এর উৎপাদন বন্ধ করেছে। তবে সংস্থার প্রধান দাবি করেছেন, TGA তাদের কারখানায় কোনো উৎপাদন ত্রুটি খুঁজে পায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা কেবল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ নয়, বরং SPF পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ল্যাব টেস্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের SPF দাবির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রিন্সটন কনজিউমার রিসার্চ কর্প (Princeton Consumer Research Corp – PCR Corp) নামের একটি পরীক্ষাগারের টেস্টের ওপর নির্ভর করেছিল।
টিজিএ এই পরীক্ষাগারটির পরীক্ষার মান নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছে এবং বিদ্যমান এসপিএফ পরীক্ষার মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা করছে। টিজিএ-এর সতর্কতা সত্ত্বেও পিসআর কর্প কোনো সাড়া দেয়নি। অন্যদিকে, পিসআর কর্প এক ইমেইল বিবৃতিতে দাবি করেছে, এসপিএফ ফলাফলে পার্থক্যের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা, কাঁচামালের মান, প্যাকেজিং বা সংরক্ষণ পরিস্থিতির মতো বাহ্যিক অনেক কারণ দায়ী হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজনের জীবনকালে একবার স্কিন ক্যানসারের কারণে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে বলে অনুমান করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সানস্ক্রিনের সুরক্ষায় এমন গুরুতর ত্রুটি দেশজুড়ে গ্রাহকদের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এর প্রভাব বৈশ্বিকভাবেও পড়তে পারে।


