সাম্প্রতিক এক গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপেলের উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব মাংসজাত খাদ্যপণ্য তৈরি করা সম্ভব। কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত এক স্বাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ১০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী ১০০% খাঁটি মাংসের বল এবং ২০% আপেলের উচ্ছিষ্ট মিশানো মাংসের বলের মধ্যে প্রায় কোনো পার্থক্য ধরতে পারেননি।
খাদ্যবিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা জার্নাল অব ফুড সাইন্স এন্ড নিউট্রিশন (Journal of Food Science and Nutrition)-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা জানান, এই পদ্ধতি খাদ্যশিল্পে একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (USDA) অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমে দেশটিতে প্রায় ১০ বিলিয়ন পাউন্ড আপেল উৎপাদিত হয়েছে। এর অধিকাংশ সরাসরি দোকান বা বাজারে যায়, তবে প্রায় ৩৫ শতাংশ ব্যবহার হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্যে, যেমন জ্যাম, জেলি, সাইডার ও ভিনেগার। প্রক্রিয়াকরণের সময় আপেলের খোসা, বীজ, শাঁস ও অন্যান্য অংশ মিলিয়ে প্রায় ২৫–৩০ শতাংশ উচ্ছিষ্ট অবশিষ্ট থাকে।
এই উচ্ছিষ্টগুলোকে শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়, যাকে পোমেস (pomace) বলা হয়। সাধারণত পোমেস পশুর খাদ্য বা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এর একটি বড় অংশ শেষ পর্যন্ত ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয়, যা থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষক পিটার গ্রেসি এবং এলাদ টাকো এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে আপেলের উচ্ছিষ্টের নতুন ব্যবহার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এর আগে আঙ্গুর ও আপেলের পোমেস দিয়ে মাংসজাত পদ তৈরি করার পরীক্ষা করা হলেও, স্বাদের দিক থেকে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাই তারা একদল স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে স্বাদ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন।
গবেষকরা বিভিন্ন জাতের আপেল সংগ্রহ করে সেগুলোর রস বের করেন। এরপর অবশিষ্ট অংশ ৪৮ ঘণ্টা ধরে শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। সেই গুঁড়ো আবার আর্দ্র করে ৮০% চর্বিহীন গরুর মাংসের সঙ্গে ১০% ও ২০% অনুপাতে মিশিয়ে মাংসের বল তৈরি করা হয়।
স্বাদের পরীক্ষায় ১০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী মাংসের বলগুলো চেখে দেখেন। গবেষকরা স্বাদ, গঠন, রঙ এবং রান্নার পরে এর পরিবর্তন বিশ্লেষণ করেন। ফলাফল দেখায়, ২০% পোমেস মেশানো হলেও স্বেচ্ছাসেবীরা স্বাদে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাননি। শুধু মাংসের বলের ভেতরের রঙ সামান্য পরিবর্তিত হয়েছিল।
এই নতুন রেসিপি কেবল পরিবেশের জন্য উপকারী নয়, এটি আরও পুষ্টিকর। পোমেস মেশানোর ফলে মাংসের বলের মধ্যে আঁশ, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, পলিফেনল এবং পেকটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা একটি সুষম খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
গবেষক টাকো বলেন, “এটি সবদিক থেকে একটি দারুণ সমাধান। এর মাধ্যমে মানুষ আরও প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার পাবে, মাংস প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোও উপকৃত হবে, এবং আপেল উৎপাদনকারীরাও নতুন আয়ের উৎস খুঁজে পাবে।”
