যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নতুন ঘোষণার মাধ্যমে এইচ-১বি (H-1B) ভিসা আবেদনে বড় পরিবর্তন এনেছেন। শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রোক্লেমেশন বা নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতিটি নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনের জন্য নিয়োগদাতাদের ১,০০,০০০ ডলার ফি দিতে হবে। এর আগে যেখানে লটারি নিবন্ধনের জন্য মাত্র ২১৫ ডলার ফি দিতে হতো, সেখানে এই বিশাল বৃদ্ধি প্রযুক্তি খাতকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এই ঘোষণার পরপরই বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের সতর্ক করেছে। অ্যামাজন, গুগল এবং মাইক্রোসফট তাদের এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের ইমেইল করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। যে কর্মীরা বিদেশ সফরে ছিলেন, তাদের দ্রুত দেশে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিজনেস ইনসাইডার অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের পাঠানো নির্দেশনা প্রকাশ করেছে, এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে গুগলও একই ধরনের বার্তা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে যে, এই নতুন ফি শুধু নতুন আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। যেসব কর্মীর কাছে ইতিমধ্যে এইচ-১বি ভিসা আছে, তাদের বা ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে না। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যে, বিদ্যমান ভিসাধারীরা আগের নিয়ম অনুযায়ী দেশে প্রবেশ বা দেশ ত্যাগ করতে পারবেন। তবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কর্মীদের অনিশ্চয়তা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে উৎসাহিত করছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছে অ্যামাজনের কর্মীরা। এরপর রয়েছে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল এবং গুগল। এই কোম্পানিগুলো বিদেশি প্রতিভার উপর নির্ভরশীল।
এইচ-১বি হলো একটি কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা। এর মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিতে পারে। প্রতি বছর ৬৫,০০০ নতুন ভিসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০,০০০ ভিসা অনুমোদিত হয়। সাধারণত এই ভিসা তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়, যা পরে নবায়ন করা যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এইচ-১বি ভিসার ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে। এর ফলে মার্কিন নাগরিকরা চাকরি হারাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসের তথ্যমতে, ২০০৩ সালে যেখানে আইটি খাতে কর্মরতদের ৩২ শতাংশ এইচ-১বি ভিসাধারী ছিলেন, এখন সেই হার ৬৫ শতাংশের বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশে পৌঁছেছে।
সমালোচকরা মনে করেন, এই নতুন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিভাবান বিদেশি কর্মীদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা হারাবে। ন্যাশনাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, অনেক সফল স্টার্টআপ ও কোম্পানি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাত ধরে গড়ে উঠেছে। টেসলার সিইও ইলন মাস্কও শুরুতে এইচ-১বি ভিসায় কাজ করেছিলেন। তিনি এই ভিসার পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকতে পেরেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রোক্লেমেশনে বলা হয়েছে যে, কিছু ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এই নিয়মে ছাড় দেওয়া সম্ভব। একই সাথে, শ্রম সচিবকে মজুরি সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তন করে মার্কিন কর্মীদের বেতন সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এইচ-১বি ভিসা বিষয়ক এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি খাতে গভীর প্রভাব ফেলবে। সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানি দক্ষ বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরশীল। নতুন ফি আরোপ হওয়ায় তাদের নিয়োগ কৌশল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা উভয়ই চাপের মুখে পড়বে।


