ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিক পর্যায়ে চীনের বন্দর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে নতুন সামুদ্রিক কৌশল ঘোষণা করেছে। ওয়াশিংটনের দাবি, চীনের দ্রুত সম্প্রসারিত বন্দর নেটওয়ার্ক কেবল অর্থনৈতিক নয়, সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বন্দর ব্যবহার করে বেইজিং গুপ্তচরবৃত্তি, সামরিক সুবিধা কিংবা আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে (supply chain) প্রভাবিত করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যেমন কসকো (COSCO), চায়না মার্চেস্টর (China Merchants) এবং এসআইপিজি’র মাধ্যমে কৌশলগত স্থানে বন্দর অধিগ্রহণ করছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশটি ২৩টি দেশে ৪৩টি বন্দর কেনা বা পরিচালনার চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এসবের মধ্যে প্যানামা খালের কাছাকাছি কয়েকটি বন্দরও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল কারণ হলো, বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্য পানামা খালের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। ফলে চীনের নিয়ন্ত্রণ সেখানে কার্যকর হলে তা ওয়াশিংটনের জন্য বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরী করতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সম্প্রতি প্যানামা সফরে গিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্যানামা খালকে চীনের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখবে। এছাড়া, চীনে নির্মিত বন্দর ক্রেন আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনাও করেছে ওয়াশিংটন। এই কৌশলে বেইজিংয়ের বন্দর শিল্পকে চাপের মুখে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
চীন এই পদক্ষেপকে “অবৈধ একক নিষেধাজ্ঞা” বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “চীন সবসময় অবৈধ ও অযৌক্তিক একক নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে। অন্য দেশের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ লঙ্ঘন করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।”
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, বন্দর নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিযোগিতা বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। ওয়াশিংটন মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কৌশলগত বন্দরগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছে, অন্যদিকে বেইজিং তাদের সামুদ্রিক নেটওয়ার্ককে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতিযোগিতা শুধু বাণিজ্য নয়, ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায়ও নতুন মাত্রা যোগ করবে। ফলে ভবিষ্যতের বৈশ্বিক অর্থনীতি ও কৌশলগত ভারসাম্য অনেকটাই নির্ভর করবে সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণের এই লড়াইয়ের ওপর।


