বহু আলোচিত টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম নিয়ে চুক্তি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ফক্স নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই চুক্তিতে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যুক্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে আছেন অরাকলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসন। আরও আছেন ডেল টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ডেল, এবং মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক ও তার ছেলে লাচলান মারডক। এরা সবাই সরাসরি চুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
‘ডেডলাইন’ নামে একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ফক্স করপোরেশন এই বিনিয়োগকারীদের দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে। ফক্স করপোরেশনের নেতৃত্বে আছেন লাচলান মারডক। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি যে এটি তাদের ব্যক্তিগত নাকি কর্পোরেট বিনিয়োগ হবে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন, চুক্তির মূল বিষয়গুলো ইতিমধ্যে চূড়ান্ত। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, টিকটকের সাত সদস্যের বোর্ডে ছয়জনই হবেন মার্কিন নাগরিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, টিকটকের অ্যালগরিদমটিও এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। লেভিট জানান, যত দ্রুত স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শেষ হবে, তত দ্রুত চুক্তি কার্যকর হবে।
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অরাকল থাকবে। এছাড়াও থাকবে সিলিকন ভ্যালির ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান আন্দ্রেসেন হরোউইটজ এবং প্রাইভেট ইকুইটি জায়ান্ট সিলভার লেক ম্যানেজমেন্ট। অরাকল নিরাপত্তা ও ডেটা সুরক্ষার দায়িত্ব নেবে। এই চুক্তির ফলে টিকটকের চীনা মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানা শেয়ার ২০ শতাংশেরও কমে নেমে আসবে।
এই চুক্তি শুধু একটি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন। ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে টিকটককে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছিল। তাদের প্রধান উদ্বেগ ছিল যে, ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল তথ্য চীনা সরকারের হাতে চলে যেতে পারে। এখন অরাকল এবং অন্যান্য মার্কিন বিনিয়োগকারীর হাতে নিয়ন্ত্রণ আসায় ওয়াশিংটন সেই উদ্বেগ দূর করতে চাইছে।
অন্যদিকে, চীন এই পদক্ষেপকে তাদের প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর মার্কিন চাপ হিসেবে দেখছে। এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি নজিরও বটে। এই নজিরের কারণে একটি জনপ্রিয় বৈশ্বিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে নতুন মালিকানায় হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের শেষে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস হয়েছিল। সেই আইনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ার পথে ছিল। চলতি বছরের শুরুতে অ্যাপটি সাময়িকভাবে বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। পরে ট্রাম্প প্রশাসন বাইটড্যান্সকে মার্কিন বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রির সুযোগ দিতে বারবার সময়সীমা বাড়ায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও এই চুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের প্রায় ১৭ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী আছে। এই অ্যাপটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। মার্কিন মালিকানায় যাওয়ায় ব্যবহারকারীরা স্থিতিশীলতা পাবেন। তবে একটি বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে: অ্যালগরিদম ও কনটেন্ট মডারেশনে রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে কি না। সমালোচকরা মনে করেন, হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ বাড়লে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চাপ আসতে পারে।
যদিও বাইটড্যান্স এখনো কিছু শেয়ার ধরে রাখবে, কিন্তু অ্যালগরিদম ও বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ায় কোম্পানির ভবিষ্যৎ কৌশল মার্কিন নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে বাধ্য। প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক মহল মনে করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে চীন-মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।


