- দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন নজিরবিহীনভাবে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টার মুখোমুখি।
- ২০০ জনের “মানব প্রাচীর,” যার মধ্যে নিরাপত্তা কর্মীরাও ছিলেন, পুলিশকে প্রবেশে বাধা দেয়।
- গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ ৬ জানুয়ারি শেষ হবে, ফলে পুনরায় প্রচেষ্টার জন্য সময় অতি সীমিত।
- ইউনের সমর্থকরা নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এবং মূলধারার গণমাধ্যমকে “ভুয়া সংবাদ” বলে নিন্দা জানায়।
- বিরোধী দল গ্রেপ্তার বাধাগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন কার্যরত প্রেসিডেন্ট, ইউন সুক-ইওল, গ্রেপ্তারের সম্মুখীন হয়েছেন। এই ঘটনা দেশটির শাসনব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব এক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
তিন সপ্তাহ আগে অভিশংসিত হওয়া সত্ত্বেও ইউন তার রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রেখেছেন। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ ৬ জানুয়ারি শেষ হবে, ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সময় সীমিত।
স্থানীয় সময় ভোরের আগে থেকেই ইউনের বাসভবন ঘিরে রেখেছিল পুলিশের একটি বড় দল। তবে তাদের প্রবেশে বাধা দেয় একটি “মানব প্রাচীর,” যেখানে প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তা কর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ মানব প্রাচীর ভেঙে সামনের দিকে অগ্রসর হলেও, প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের কৌশলী অবস্থানের মুখে থমকে দাঁড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা ও সংঘর্ষের পর, পরিস্থিতিকে “প্রায় অসম্ভব” বিবেচনা করে তদন্তকারীরা অভিযান স্থগিত করে।
সিআইও (Corruption Investigation Office) জানায়, বাস ও যাত্রীবাহী গাড়ি দিয়ে প্রবেশপথ আটকে রাখা হয় এবং প্রায় ২০০ জন লোক শারীরিক বাধা তৈরি করে। এই সংঘর্ষের ফলে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
আইন প্রয়োগ ও শাসনব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
গ্রেপ্তারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা দক্ষিণ কোরিয়ার আইন প্রয়োগ ও শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ইউনের নিরাপত্তা প্রধান পার্ক জং-জুন ও তার ডেপুটির বিরুদ্ধে বিচার বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ এনেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের সীমাবদ্ধতা ও কার্যরত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি টিমকে অতিক্রম করার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কতটা কার্যকর হতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ইউনের সমর্থকরা নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ তুলে স্লোগান দিয়েছেন “Stop the steal,”। প্রসঙ্গত, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বের অভিযোগের সঙ্গে তুলনীয়। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্ট এসব অভিযোগ খারিজ করেছে, তার সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে এগুলো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
সমর্থকদের মধ্যে অনেকেই মূলধারার গণমাধ্যমকে “ভুয়া সংবাদ” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব অভিযোগ ও বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা ইউনের বাসভবনের চারপাশে সমবেত হচ্ছেন। ফলে তার ভবিষ্যৎ গ্রেপ্তার প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলবে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তদন্তকারীরা কৌশল পরিবর্তন বা নতুন পরোয়ানা জারি করার পরিকল্পনা করছেন। তবে উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি বিবেচনা করে তারা সতর্ক রয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের শাসনব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের আস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই নজিরবিহীন অধ্যায়ের পরিণতি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।