- দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র সংঘাত।
- ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলোর ঐক্য নিয়ে গভীর সন্দেহ।
- অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আক্রমণ করে কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের বিতর্কিত মন্তব্য।
- রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘাত একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হলেও জোটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে রাজনৈতিক ময়দান। ইন্ডিয়া জোটের শরিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র সংঘাত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন সম্প্রতি অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “কেজরিওয়াল ফর্জিওয়াল (জালিয়াত)।” তিনি দিল্লির উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন, আপ দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও ব্যর্থ হয়েছে।
এই মন্তব্যে আপ নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী এবং রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং অভিযোগ করেন, কংগ্রেস ইচ্ছাকৃতভাবে বিজেপিকে সুবিধা দিতে কাজ করছে।
ইন্ডিয়া জোটে ফাটলের ইঙ্গিত
আপ এবং কংগ্রেসের এই দ্বন্দ্ব ইন্ডিয়া জোটের ঐক্যে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোও কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেস জোটের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বহুবার। নেত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজেই জোটের নেতৃত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে জোটের শরিক সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, এনসিপি, এবং জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারাও মমতার সমর্থনে কথা বলেছেন।
নির্বাচনি কৌশল, নাকি স্থায়ী দ্বন্দ্ব!
বিশেষজ্ঞদের মতে, আপ এবং কংগ্রেসের এই সংঘাত হয়তো নির্বাচনি কৌশল।
বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বলেন, “দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের পর এই দ্বন্দ্ব মিটে যেতে পারে। আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে এই টানাপোড়েন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।”
সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য একমত পোষণ করে বলেন, “আম আদমি পার্টির উত্থানই কংগ্রেসের বিরোধিতার মাধ্যমে, তাই তাদের সম্পর্ক বরাবরই জটিল। তবে এটি নির্বাচনি পরিস্থিতি তৈরি করতে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে।”
বিজেপির সম্ভাব্য সুবিধা
কংগ্রেস এবং আপের সংঘাতের সুযোগ নিতে চাইছে বিজেপি। দলের জাতীয় মুখপাত্র ড. সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, “ইন্ডিয়া জোটের এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিজেপির শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “দিল্লির ভোটাররা ইন্ডিয়া জোটের অসংগতির কারণে বিজেপির ওপর ভরসা করতে বাধ্য হবেন।”
তৃণমূলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
ইন্ডিয়া জোটের এই ভাঙনের সুযোগ নিতে প্রস্তুত তৃণমূল কংগ্রেস। জাতীয় রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জী ইতোমধ্যেই প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছেন। বিশেষত সংখ্যালঘুদের সমর্থন নিয়ে মমতা জাতীয় স্তরে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে চান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেস এবং মমতার মধ্যকার শক্তি ভারসাম্যই নির্ধারণ করবে জোটের নেতৃত্ব।
বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “যদি নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে হয়, তবে কংগ্রেসকে আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। মমতা নেতৃত্বের দাবি তুলতে পারেন, তবে কংগ্রেস ছাড়া কোনো জাতীয় জোট টেকসই হবে না।”
ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি-বিরোধী ঐক্য টিকিয়ে রাখতে ইন্ডিয়া জোটকে কৌশলগতভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তবে আপ এবং কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব জোটের শক্তিকে দুর্বল করতে পারে।
স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসের জাতীয় উপস্থিতি এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনে সাফল্য তাদের জোটের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখবে। তবে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাবকেও অস্বীকার করা যাবে না।”
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন ইন্ডিয়া জোটের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপ এবং কংগ্রেসের সংঘাত শুধু দিল্লির রাজনীতিই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে বিজেপির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে হলে এই দ্বন্দ্ব দ্রুত মিটিয়ে জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। অন্যথায়, বিরোধী জোটের দুর্বলতা বিজেপির জন্য বড় সুবিধা হয়ে উঠতে পারে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি
মেটা বিবরণ:
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের সংঘাত চরমে। ইন্ডিয়া জোট কি এই ভাঙন সামাল দিতে পারবে? বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।