নেপালে জেনজি’দের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পতন হলো কেপি শর্মা অলির সরকারের। এই আন্দোলনের নেপথ্যের মূল নায়ক হিসেবে সামনে এসেছে ৩৬ বছর বয়সী সুধন গুরুং। তিনি আগে ছিলেন একজন ডিজে। বর্তমানে তিনি ‘হামি নেপাল’ নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং মূল নেতৃত্বে রয়েছেন।
গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭২ জন নিহত এবং এক হাজার ৩০০-এর বেশি মানুষ আহত হন। এটি সাম্প্রতিক দশকে নেপালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রাজনৈতিক সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তরুণদের সংগঠিত করতে গুরুংয়ের দল ভিপিএন ব্যবহার করে নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। তারা ডিসকর্ড ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেয়, যা লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে। একজন ছাত্র জানিয়েছেন, ডিসকর্ডের একটি গ্রুপে তিনি আহ্বান পান সংসদের কাছে মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য।
হামি নেপালের প্রথম পোস্টগুলো এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে সেগুলো জাতীয় টেলিভিশনেও উদ্ধৃত হয়। আন্দোলনের সময় হামি নেপালের সদস্যরা গুজব শনাক্ত করে তা খণ্ডন করেছে এবং হাসপাতালে যোগাযোগের নম্বর ছড়িয়ে দিয়েছে, যা আহতদের চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক সহায়তা দিয়েছে।
১৮ বছরের শিক্ষার্থী কারান কুলুং রাই জানান, তিনি সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও একটি ডিসকর্ড গ্রুপে আমন্ত্রণ পান, যেখানে প্রায় ৪০০ সদস্য ছিল। সেই গ্রুপ থেকেই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব গঠনে গুরুংয়ের সংগঠন সরাসরি ভূমিকা রাখতে শুরু করে। তারা প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানকে রাজি করিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগে সহায়তা করে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত কার্কি নেপালের প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তবে গুরুং ও তার সঙ্গীরা কোনো মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
হামি নেপালের স্বেচ্ছাসেবক রোনেশ প্রধান বলেন, “আমরা রাজনীতিবিদ হতে চাই না। সুধন গুরুং কেবল জেন-জি আন্দোলনকে সহায়তা করেছেন। আমরা জাতির কণ্ঠস্বর, নেতৃত্বের পদে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।”
সুধন গুরুংয়ের নেতৃত্বে হামি নেপালের অনলাইন উপস্থিতি দ্রুত শক্তিশালী হয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তাদের অনুসারীর সংখ্যা এক লাখ ষাট হাজার ছাড়িয়েছে। গুরুংয়ের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম ও ডিসকর্ডে সক্রিয় ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ক্যাফে মালিক ওজাস্বি রাজ থাপা এবং আইন বিষয়ে স্নাতক রেহান রাজ দঙ্গল।
ওজাস্বি রাজ থাপা দ্রুত আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি বলেছেন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অগ্রাধিকার। তিনি আরও জানিয়েছেন, সংবিধানে কিছু সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, তবে সংবিধান ভাঙার কোনো পরিকল্পনা নেই।
সুধন গুরুংয়ের অতীতও তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নয় হাজার মানুষের মৃত্যু হলে তিনি ত্রাণ কার্যক্রম সংগঠিত করেছিলেন। করোনা মহামারির সময়ও তার সংগঠন মাঠে কাজ করেছে।
আজকের নেপালে ডিজে থেকে বিপ্লবী সুধন গুরুং যে যাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা শুধু রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের দিশা নির্দেশ করছে। গুরুংয়ের নেতৃত্বে তরুণরা কেবল একটি সরকার পতন ঘটায়নি, একই সাথে নেপালের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছে।


