আকীল আকতাব
ব্রিটেন, কানাডা, ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ কৌশল আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একই সাথে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে। একই দিনে পর্তুগালও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আরও কিছু পশ্চিমা দেশ এই পথে হাঁটতে পারে।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া অবশ্যই একটি বড় রাজনৈতিক এবং প্রতীকী জয়। কিন্তু মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো, ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যা এখনো চলছে। গাজায় বিমান হামলা ও স্থল সেনা অভিযানের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ মারা গেছে এবং যাচ্ছে।
ইসরায়েলের বর্বর হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারীরাও আছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার বলছে যে ইসরায়েলের এই আচরণ সরাসরি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে খাবার ও পানির সংকট বেড়েই চলেছে, যা মানবিক বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
পশ্চিমের দেশগুলোর এই স্বীকৃতির ফলে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী হবে। ব্রিটেন ও কানাডা অনেক দিন ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এখন তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। ফলে ইসরায়েল সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে দ্বৈততা স্পষ্ট। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। জাতিসংঘের স্বীকৃতি প্রস্তাব বারবার যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর মুখে পড়েছে। এই কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনৈতিক ও দ্বিমুখী মনে হচ্ছে। উপরন্তু, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থন পশ্চিমা নীতির নৈতিকতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলছে।
গাজায় মানবিক সংকট চরমে। সেখানে খাবার ও চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে। গণহত্যাও চলছে। এই অবস্থায় ফিলিস্তিনের জনগণ আক্ষরিক অর্থেই অসহায়। স্বীকৃতি রাজনৈতিক শক্তি দেবে, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে বন্দিদের মুক্তি বা খাদ্য সংকটের সমাধান করবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ নেওয়া নয়, বরং বাস্তব সমাধান নিশ্চিত করা। এর মধ্যে রয়েছে মানবিক সহায়তা, যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্বের মোকাবিলা করা।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোর নৈতিক দায়িত্বও সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শক্তি ও স্বার্থের পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্ব, মানবাধিকার এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠাও গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন, গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনিচ্ছা একটি গভীর সতর্কবার্তা। এটি প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ এবং দৃঢ় নৈতিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পিছিয়ে রয়েছে।
রাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং এর জনগণ দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা, জবরদখল, উচ্ছেদ, সীমাবদ্ধতা এবং অবর্ণনীয় দমন সহ্য করছে। এই স্বীকৃতি তাদের মনে নতুন আশা সঞ্চার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তারা মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালনে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও আন্তরিক তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ।


