ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া একযোগে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে এই ঘোষণা আসে, যা পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতিতে এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই দিনে পর্তুগালও নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রাক্কালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ব্রিটেন ও কানাডা প্রথম জি৭ দেশ হিসেবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক্স-এ বার্তায় বলেন, “আজ আমরা ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের শান্তির আশাকে পুনর্জীবিত করতে এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেন, “কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে অংশীদার হতে চায়।” অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও একই দিনে স্বীকৃতি ঘোষণা করেন।
তবে এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে “অযৌক্তিক পুরস্কার” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ইসরায়েলের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলবে। তিনি জাতিসংঘে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করার ঘোষণা দেন।
গাজার পরিস্থিতি ও চলমান মানবিক সংকট এই আন্তর্জাতিক অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ভয়াবহ খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক।
বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ দেশ ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে প্রায় ১৪০টি দেশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে। পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের বহুদিনের রাষ্ট্র স্বপ্নকে নতুন গতি দিল।
যুক্তরাজ্যের উপপ্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি গত জুলাইয়ে জাতিসংঘে বলেছিলেন, ব্রিটেনের ওপর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করার। তিনি স্বীকার করেন, শুধু স্বীকৃতি দিয়েই তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সংকট বা জিম্মি মুক্তির সমাধান হবে না, তবে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে যে দখল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন এএফপিকে বলেন, “স্বীকৃতি কেবল প্রতীকী নয়। এটি ইসরায়েলের জন্য একটি বার্তা—তাদের দখলদারিত্ব চিরস্থায়ী নয়।”
এখন দৃষ্টি নিবদ্ধ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের দিকে, যেখানে ফ্রান্সসহ আরও কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।


