বিশ্ব ফুটবলের গতিপথ বদলে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে সৌদি আরব। প্রো লিগকে বিশ্বসেরা তারকাদের মিলনমেলায় পরিণত করতে দেশটি বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে সৌদি ক্লাবগুলো তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার চমৎকার প্রদর্শন করেছে। তবে সবচেয়ে বড় চমক এনে দিয়েছে আল হিলাল। নেইমারকে ৯ কোটি ইউরো দিয়ে দলে টানার মাধ্যমে তারা ইউরোপের বাইরের ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি স্কোয়াড গড়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজ (CIES) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বর্তমান স্কোয়াডের দলবদলের মোট খরচ (বোনাস, ভাতা এবং পারফরম্যান্স সাপেক্ষে অন্যান্য আর্থিক পুরস্কারসহ) পর্যালোচনা করে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ক্লাবের তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের বাইরের একমাত্র ক্লাব হিসেবে শীর্ষ ২০-এ স্থান করে নিয়েছে আল হিলাল।
আল হিলালের বর্তমান স্কোয়াডের মোট মূল্য ৩৮ কোটি ২০ লাখ ইউরো (প্রায় ৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা)। এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তারা বার্সেলোনা, এসি মিলান, ইন্টার মিলান, আয়াক্স এবং বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোকেও পেছনে ফেলেছে।
অ-ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর মধ্যে আল হিলালের পাশাপাশি সৌদির আরও তিনটি ক্লাব প্রথমবারের মতো এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ফিরমিনো ও মাহরেজের মতো তারকা দলে যোগ দেওয়ায় আল আহলি, রোনালদো ও মানের মতো খেলোয়াড় নিয়ে স্কোয়াড গঠন করায় আল নাসর এবং বেনজেমা ও কান্তেকে দলে ভিড়িয়ে আল ইত্তিহাদ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এ ছাড়া মেক্সিকোর লিগা এমএক্সের তিনটি এবং ব্রাজিলের সিরি ‘আ’-এর দুটি ক্লাবও শীর্ষ ১০০-তে জায়গা পেয়েছে।
তবে দলবদলের খরচের দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাদের বর্তমান স্কোয়াডের মোট মূল্য ১১৫ কোটি ইউরো (প্রায় ১৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা)।
ইউরোপে শতকোটি ইউরোর বেশি খরচ করে স্কোয়াড গড়েছে আরও তিনটি ক্লাব—চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি এবং পিএসজি।
ইংল্যান্ডের শীর্ষ ১০ ক্লাবের মধ্যে জায়গা পাওয়া দলগুলো হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল, টটেনহাম হটস্পার, লিভারপুল, নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড।
ইংল্যান্ডের তালিকায় নিউক্যাসল ইউনাইটেড একটি বড় চমক। ২০২১ সালে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মালিকানায় আসার পর থেকে ক্লাবটি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে তাদের স্কোয়াডের মূল্য ৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো (প্রায় ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা)।
সৌদি আরবের এই বিনিয়োগ কৌশল ফুটবলের গতানুগতিক শক্তি কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ইউরোপের বাইরের ক্লাবগুলো যে বিশ্ব ফুটবলে নতুন প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে, আল হিলালের মতো ক্লাবগুলো তা প্রমাণ করছে।