- সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না।
- সংস্কারের কাজে সর্বস্তরের নাগরিকদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
- ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
- বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও সমাজ নির্মাণে সরকারের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৭ : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বলেছেন, “বাংলাদেশে সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চলতে হবে।” জাতীয় সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস)। এ সংলাপের স্লোগান ছিল, ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন।’
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতির দায়িত্ব মূলত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সংস্কারের কাজ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়।” তিনি জনগণকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, সংস্কার প্রক্রিয়া শুধু ভোটারদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। “যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন, তারাও আজ থেকেই সংস্কারের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করুন,” তিনি বলেন।
ড. ইউনূস জানান, জানুয়ারিতে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা হবে। এই প্রতিবেদনগুলোতে দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের বিকল্প সুপারিশ থাকবে। তিনি বলেন, “কমিশনের কাজ হলো গুরুত্বপূর্ণ বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলোর মধ্যে সেরা একটি সুপারিশ জাতির সামনে তুলে ধরা।”
তিনি আরও বলেন, কমিশনের সুপারিশ মানতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। “এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য গঠনের একটি কমিশনও তৈরি করা হয়েছে, যেখানে জনগণের মতামত নির্ধারণ করা হবে,” তিনি জানান।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের ছাত্র-জনতা যে সাহসিকতার সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।” তিনি শহীদদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করতে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদ আমাদের দেশকে মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করেছিল। আমরা সেই পথ থেকে ফিরে এসে সাম্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছি।”
বৈষম্যহীন অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে সকল নাগরিক—নারী-পুরুষ নির্বিশেষে—সমান সুযোগ পাবেন।” তিনি যোগ করেন, “যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারবেন, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়।”
সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু পরিচিতির বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র নাগরিকত্বের ভিত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন “এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা অসাধ্যসাধন করতে পারি। গত পাঁচ মাসে আমাদের ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে।” তিনি সতর্ক করেন যে, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোকে ভাঙার জন্য বিরোধীরা ক্রমাগত চেষ্টারত। “তবু আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে,” তিনি বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর আমরা দেশ গড়ার এক নতুন সুযোগ পেয়েছি। যদি আমরা এই সুযোগ হাতছাড়া করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।” তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংস্কারের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
সংস্কার, ঐক্য এবং নির্বাচন—এই তিনটি বিষয় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অপরিহার্য উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দৃঢ়ভাবে বলেন যে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব।