মঙ্গলবার | আগস্ট ১২ | ২০২৫
  • ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ড।
  • বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত।
  • নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
  • ৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে।
  • ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪: গত ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে ঢাকার সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস রাত ১টা ৫৪ মিনিটে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়।

৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত বিস্তৃত ভবনটিতে অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ সড়ক পরিবহন ও সেতু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দায়িত্ব পালনকালে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহানুর জামান নয়ন (২৪) একটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

সরকার দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিটি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান নাসিমুল গনি বলেন, “তদন্ত কমিটির সবাই একমত হয়েছে যে, বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটিই এই অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ। তবে ভবনের অভ্যন্তরীণ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও একটি বড় কারণ।”

বিশেষজ্ঞ মতামত

বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী উল্লেখ করেন, “আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ছিল আগুন ছড়ানোর মূল কারণ। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখানে প্রথমে স্ফুলিঙ্গ (ফুলকি) দেখা যায়। এরপর তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে গিয়ে আগুন ধরেছে।”

সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রাসেল জানান, “আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছি। বিস্ফোরক ব্যবহারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এমনকি ডগ স্কোয়াডের পরীক্ষাতেও নাশকতার প্রমাণ মেলেনি।”

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, “ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং বৈদ্যুতিক তারের সমাবেশ আগুন ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করেছে। করিডরের টানেল গেইট এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার ডিটেক্টর সিস্টেম এবং কন্ট্রোল প্যানেলের অভাবও অগ্নি নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি করে।”

প্রতিক্রিয়া ও করণীয়

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।” বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং ভবনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, “ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ নিরূপণের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে তালিকা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে।”

সচিবালয়ের মতো প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দুতে এমন অগ্নিকাণ্ড জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত। বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়া ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে উন্নত অগ্নি সতর্কতা ব্যবস্থা, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়মিত পর্যালোচনা প্রয়োজন।

Leave A Reply

নির্বাহী সম্পাদক : সাঈদ আহমেদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : ফরহাদ হোসাইন
আঞ্চলিক অফিস নিকেতন হাউজিং সোসাইটি, গুলশান, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।
যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: info@informer365.com
©2025 Informer365 বাংলা (Bengali). Designed by PaddlePress.
Exit mobile version