- কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।
- ঘোষণাপত্রে পুরাতন রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান এবং নতুন কাঠামোর দিকনির্দেশনা থাকবে।
- সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে এ উদ্যোগ ঘিরে।
- দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
য়াকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪: আগামী ৩১ ডিসেম্বর দুপুর তিনটায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেসবুকে একাধিক পোস্টের মাধ্যমে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বাংলামোটরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “যেভাবে জুলাই অভ্যুত্থানে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে ৩১ ডিসেম্বরও মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে।” তিনি আরও জানান, ওইদিন ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে, যা ৫ আগস্ট প্রকাশিত হওয়া উচিত ছিল। তবে তা হয়নি, যার ফলে স্বৈরাচারের দোষররা এখনও সক্রিয় রয়েছে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ ৭২-এর মুজিববাদী সংবিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ৭২-এর সংবিধানের বিরুদ্ধে যেভাবে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেটিকে স্বীকৃতি দিতে আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবো।”
“এটি কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রক্লেমেশন নয়” উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত জাতি। আর যেন আমরা প্রতারিত না হই, তার জন্যই এই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই, যেখান থেকে এক-দফা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকেই মুজিববাদের কবর রচনা করা হবে।”
ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, “আমাদের মতে, এই ঘোষণাপত্র আরও আগেই প্রকাশ করা উচিত ছিল। এটি এমন একটি দলিল হবে, যা সারা বাংলাদেশে লিখিত অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। ঘোষণাপত্রটি পুরোনো সিস্টেমগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে একটি নতুন সিস্টেম তৈরির দিকনির্দেশনা দেবে।
তিনি আরও বলেন, “আগামীতে মানুষ যখন ভোট দিতে যাবে, তখন তারা বুঝতে পারবে কোন প্রেক্ষাপটে এই অভ্যুত্থান ঘটেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, যেভাবে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন মানুষের মনকে সক্রিয় করেছিল, ঠিক তেমনি এই ঘোষণাপত্র মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, এই ঘোষণাপত্র পুরাতন রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্তিম ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি নতুন প্রজন্মের তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও একাত্মতার প্রতীক হয়ে উঠবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘোষণাপত্র দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের কাঠামো নির্মাণে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতি
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী এবং তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, শহীদ পরিবারের লোকজন ছাড়াও সব রাজনৈতিক দল ও গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জড়ো হবে। নাৎসিবাদী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৩১ ডিসেম্বর শুধু ঘোষণাপত্রের দিন নয়, এটি হবে নতুন বাংলাদেশের সূচনা।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন যুগের সূচনা হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন আন্দোলনের নেতারা।