নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আলোচিত ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গুলি ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সেলিম প্রধান অভিযোগ করেছেন, তাঁর মালিকানাধীন একটি আড়ত দখলে রাখতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের অনুসারীরা এই হামলায় অংশ নিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন ছাত্রদল কর্মী মো. রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়া। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ দুইজন তাঁর অনুসারী এবং ছাত্রদল কর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম শতাধিক লোকজন নিয়ে গোলাকান্দাইল এলাকায় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় স্থানীয় যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের নেতাকর্মীরাও হামলায় যোগ দেন।
হামলার সময় বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছিলেন সেলিম প্রধানের পক্ষে থাকা ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমানের অনুসারীরা। তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্র, গুলি এবং বোমার ব্যবহার দেখা যায়।
ঘটনার সময় মুহুর্মুহু গুলি এবং বোমা বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে থাকা অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং একটি টিনসেড ঘরে আগুন দেয়। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে এবং উভয়পাশে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
সেলিম প্রধান দাবি করেছেন, বিগত সরকারের সময়ে তাঁর মালিকানাধীন ১৬ বিঘা জমি জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে দখল করা হয়। জেলে থাকার সময় রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিব, স্থানীয় সাংবাদিক নেতা মীর আব্দুল আলীম, এবং মজিবুর ভূঁইয়া ওই জমি দখল করেন।
সেলিম প্রধান জানান, তিনি জেল থেকে বের হয়ে জমি ফেরত চাইলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমি ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি গত বছরের ২৪ মে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। বর্তমান হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ করে এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর গুলি চালায়।
স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম দাবি করেছেন, মঙ্গলবার ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে সন্ত্রাসবিরোধী মিছিল নিয়ে গোলাকান্দাইলের দিকে যাওয়া হচ্ছিল। মিছিলটি সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে ছাদ থেকে সেলিম প্রধানের অনুসারীরা অতর্কিতে গুলি চালায় এবং মিছিলে হামলা করে। এতে তাদের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘সেলিম প্রধান ও মজিবুর ভূঁইয়ার মধ্যে আড়ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। মজিবুর ভূঁইয়ার লোকজন সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায়। গুলি এবং বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে।’
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলির খোসা এবং একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
সেনাবাহিনী এবং পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বর্তমানে এলাকাটিতে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এই সহিংসতায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সেলিম প্রধান আড়ত এবং জমির মালিকানা বুঝে পেতে আদালতে মামলা করেছেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, এবং স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এ ঘটনার ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পক্ষ।