- বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিয়ে দাখিল করা পিটিশন শুনানির অযোগ্য ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ।
- আদালত জানায়, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
- আবেদনকারী ভারতের ইসকন মন্দির স্টিয়ারিং কমিটির উপসভাপতি রাজেশ ঢানডা এবং প্রধান আইনজীবী ছিলেন মুকুল রোহাতগি।
- নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর অধীনে ‘কাট-অফ ডেট’ বাড়ানোর দাবি উত্থাপিত হলেও আদালত হস্তক্ষেপ করেনি।
বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের কথিত সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ পিটিশনের শুনানি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ পিটিশনটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন এবং আবেদনকারীকে তা প্রত্যাহার করতে বলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, এটি প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, যা ভারতের আদালতের বিচার্য হতে পারে না।
পিটিশনটি দায়ের করেছিলেন ভারতের ইসকন মন্দির স্টিয়ারিং কমিটির উপসভাপতি ও লুধিয়ানার ‘ভগবান জগন্নাথ রথযাত্রা কমিটি’র প্রধান রাজেশ ঢানডা। পিটিশনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হামলার শিকার হচ্ছেন, যার প্রতিকারে ভারত সরকার যেন বাংলাদেশের প্রতি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। ভারতের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি খান্না বলেন, ‘এটি কোনোভাবেই আমাদের বিষয় নয়। আপনাদের কি মনে হয়, সরকার এ সম্পর্কে অবহিত নয়? আমাদের আদালত এই বিষয়ে কী করতে পারে?’ তিনি আরও বলেন, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয় এবং আদালত প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট মনোভাব বুঝতে পেরে আবেদনকারীর আইনজীবী শেষ পর্যন্ত পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নেন, তবে জানান যে, তাঁর মক্কেল এ বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন।
পিটিশনে ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর অধীনে ‘কাট-অফ ডেট’ বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়েছিল, যাতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুরা ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। একইসঙ্গে, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সহায়তা প্রদানের জন্য বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। তবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়গুলোতে কোনো রায় না দিয়ে পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতে এই আবেদন খারিজ হওয়ায় ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আর কোনো মামলা করার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ভারতপন্থী স্বৈরশাসক এবং গুম ও গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি এবং গণঅভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ভারতীয় মিডিয়া একাধিক কল্পিত ঘটনা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন প্রচার করে। ভারত সরকারের একাধিক নেতা এই অপপ্রচারে অংশগ্রহণ করেন। তবে, ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর কুখ্যাতি থাকায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেন এবং ভারতীয়দের দাবিকে অতিরঞ্জিত বলে উল্লেখ করার পর এই মামলা দায়ের করা হয়।