- ভারত ও আফগান নেতাদের মধ্যে ২০২১ সালের পর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে দুবাইতে।
- আলোচনার মূল বিষয় ছিল মানবিক সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শরণার্থী সমস্যা।
- চাবাহার বন্দরের সম্ভাবনা, বাণিজ্য এবং খেলাধুলা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
- ভিসা এবং কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় ভারতে আফগান দূতাবাস বন্ধ হয়ে গেছে।
ভারত বর্তমানে আফগানিস্তানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পুনরায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। তবে ভারত এখনও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
৮ জানুয়ারি দুবাইতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং আফগানিস্তানের কার্যকরী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলবি আমির খান মুত্তাকি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা করেন। এটি ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক।
দুবাই বৈঠকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন। বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা এবং শরণার্থী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সহায়তার অনুরোধ করেছেন। জবাবে ভারত মানবিক সাহায্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই সহায়তা খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। কূটনৈতিক জটিলতা সত্ত্বেও ভারতের এই পদক্ষেপটি আফগান জনগণের প্রতি তাদের মানবিক অবস্থান প্রদর্শন করে।
ভারত পূর্বেও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা দিয়েছে। অতীতে ভারত গম, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং শীতের কাপড় পাঠিয়েছে। বর্তমান বৈঠকে ভারত এই সাহায্য অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকে ভারতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষত, স্বাস্থ্যসেবা এবং শরণার্থী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। একইসঙ্গে, ভারতের পক্ষ থেকে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
চাবাহার বন্দরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দর আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের অন্যতম দরজা। উভয় পক্ষই এই বন্দরটি ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আফগানিস্তানে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেট উন্নয়ন সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ভারতের সহায়তায় আফগান ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার সুযোগ পেতে পারে।
এই সমস্ত ইতিবাচক অগ্রগতির মধ্যেও দুই দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ জটিল। ভারত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর কাবুলে তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে, দিল্লিতে অবস্থিত আফগান দূতাবাসও বন্ধ হয়ে গেছে।
আফগান রাষ্ট্রদূত ফারিদ মামুনজাই জানিয়েছেন, আফগান কূটনীতিকরা ভিসা নবায়ন নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। একইসঙ্গে, তালেবান সরকার এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের জন্য চাপ ছিল। এর ফলে অনেক কূটনীতিক অন্য দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
ভারতের এই পদক্ষেপ প্রতিবেশী পাকিস্তানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান ভারতের পদক্ষেপকে অনুমেয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হলে ভারত প্রায়ই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়।