- হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে ৫ জানুয়ারি।
- প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি।
- ই-জুডিশিয়ারির আওতায় উচ্চ ও জেলা আদালতকে নিয়ে আসা হবে।
- পেপার ফ্রি কার্যক্রমে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত, স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত হবে।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত করতে যাচ্ছে কাগজমুক্ত বা পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম। আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি সংক্রান্ত একটি বেঞ্চে এ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে বিচার বিভাগে আধুনিকায়ন এবং স্বচ্ছতার এই প্রচেষ্টা জনগণের হয়রানি কমাতে এবং সময়োপযোগী সেবা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।
মূলত ২ জানুয়ারি এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই দিন সুপ্রিম কোর্টে বিচার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। ফলে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৫ জানুয়ারি। এই বেঞ্চে সকল নথিপত্র অনলাইনে দাখিল ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ
২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেন, যা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি বিচার বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, গতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষ নিশ্চিত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে এই রোডম্যাপের আওতায় পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠনের পাশাপাশি অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই অগ্রগতিগুলো আইনজীবী মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
ই-জুডিশিয়ারির অগ্রগতি
বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে জেলা আদালত পর্যন্ত সকল পর্যায়ে পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর, সাশ্রয়ী এবং হয়রানিমুক্ত হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথিপত্র দাখিল এবং বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার ফলে আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসবে। এটি মামলা পরিচালনার সময় কমাবে এবং জনগণের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় করবে। প্রধান বিচারপতি আশাবাদী যে, এই প্রকল্প সফল হলে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলের মতে, পেপার ফ্রি কার্যক্রমের এই উদ্যোগ বিচার বিভাগে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এটি কেবলমাত্র বিচার প্রক্রিয়াকে আধুনিক করবে না, বরং আদালতের কাজে জনগণের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে।
শুধু একটি বেঞ্চ দিয়ে শুরু হলেও, ২০২৫ সালের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চেও এই কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের সকল জেলা আদালতেও কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।
জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার
বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা আনার পাশাপাশি এই উদ্যোগ জনগণের হয়রানি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিশ্বাস করেন, এই ধরনের সংস্কার জনগণের বিচার ব্যবস্থার প্রতি হারানো আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবমুক্ত এবং আধুনিক করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তার রোডম্যাপ বাস্তবায়নের এই ধারাবাহিকতায় কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় কাগজমুক্ত কার্যক্রম চালু করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথকে সহজ করবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগের এই আধুনিকায়ন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।