- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনাজপুরে বক্তব্য দিয়েছেন।
- তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হলেও ঐক্যের পথে ব্যর্থতা রয়েছে।
- দেশের সম্পদ পাচারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেছেন।
- তরুণদের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
- বিএনপির নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের জন্য তিনি নতুন সম্ভাবনা দেখছেন।
দিনাজপুর, ৩ জানুয়ারি ২০২৫: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে, কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে।” ফখরুলের এই মন্তব্য দেশটির রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতের প্রতি তার গভীর উদ্বেগ এবং সরকারের বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “যারা রাজনীতি করছি, আমাদের ব্যর্থতা ৫৩ বছরেও বাংলাদেশকে একটা সুখী, শান্তিময়, প্রেমময় দেশ গড়তে পারলাম না। আমরা রাজনীতি নিয়ে সংকীর্ণতায় ভুগি এবং নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছি। আমরা যে গর্বিত জাতি, কিছুদিন আগেও সেটা বলতে পারিনি। এখন আবার সেই আশা জেগে উঠেছে, আমরা একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখী, সুন্দর, প্রেমময়, গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করবার, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে।”
“আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করি না’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ’১৫ বছর ভোট দিতে পারিনি। এ কেমন গণতন্ত্র, যেখানে মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশে পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যদি সহনশীলতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে সত্যিকার গণতন্ত্র লাভ হবে। আমরা অধিকার অর্জন করতে পারব।”
নতুন সম্ভাবনা ও তরুণদের ভূমিকা
মির্জা ফখরুল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “আজকে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ছেলেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছেন। দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক–অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের ৮০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কী ভয়ংকর অবস্থা আমরা পার হয়েছি। আজ নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি না, আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানাব, আসুন, আমরা উঠে দাঁড়াই। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট সত্য সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করি।”
তিনি তরুণদের প্রশংসা করে আরও বলেন, “আজকে আমি দেখি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে মতামত নিচ্ছে। তারা দেশপ্রেমের কথা, পরিবর্তনের কথা বলছেন। সত্যিকার অর্থে তারা বাংলাদেশ নির্মাণের একটি পথ দেখাতে পারেন। সুতরাং নেতিবাচক চিন্তা নয়, আমাদের পরস্পরকে সহনশীলতার মধ্য দিয়ে আনতে হবে, সম্মান করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা
ফখরুল সরকার বিরোধী বক্তব্যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়নের ওপরে পাচার হয়েছে। এরা তো এ দেশেরই মানুষ। রাজনীতির কথা বলেই তাঁরা এসেছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। সমস্ত ক্ষমতা ও রাষ্ট্রকে দখলে নিয়ে রাষ্ট্রে একটা ভয়ভীতি তৈরি করেছিলেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব।”
শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা
ফখরুল শিক্ষার্থীদের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন খুব সংকট ও বিপর্যয়ের সামনে। ফ্যাসিবাদী সরকার ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তোমাদের মধ্য থেকেই অনেকে বেরিয়ে আসবে, পলিসি মেকার তৈরি হবে, অর্থনীতিবিদ তৈরি হবে, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে সক্ষম হবে।”
তিনি বলেন, “এটা আমার প্রত্যাশা।”
মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের পরিচয় দেয়। তিনি দেশের একতাবদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট পথ নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। ফখরুলের ভাষায়, সংকীর্ণতা ঊর্ধ্বে উঠতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।