- বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব করেছে।
- ২০১৯-২০২৩ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ৬৯% অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
- গাজার মানবিক সংকটের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে সতর্ক।
- অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতির অংশ, কংগ্রেসের অনুমোদন আগামী প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাইডেন প্রশাসন সম্প্রতি কংগ্রেসকে জানিয়েছে যে, তারা ইসরায়েলকে ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র সরবরাহ করবে। এই অস্ত্র প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে প্রিসিশন-গাইডেড বোমা, এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল, হেলফায়ার মিসাইল এবং আর্টিলারি শেল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাদের কাছেি এই অস্ত্র বিক্রি করা হবে। তবে, এই অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব কার্যকর করতে কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন। মার্কিন নীতি মেনে এই প্রস্তাব কংগ্রেসে উত্থাপন করা হয়েছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তার নামে বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির পর এসেছে। মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে, এই অস্ত্রগুলো ইরান এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হবে, যাতে ইসরায়েল তার নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে পারে।
অন্যদিকে, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরায়েলের ৬৯% কনভেনশনাল অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে। দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা অত্যন্ত শক্তিশালী, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করে। এদিকে, ২০২৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি অনুমোদন করেছে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।
গাজার মানবিক সংকট
এই অস্ত্র চুক্তির ঘোষণা এসেছে গাজার ইসরায়েলি অভিযানের সমালোচনার মধ্যে, যা ৭ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে হামাসের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে চলমান। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৪৫,৫৮০ জনেরও বেশি মানুষ ইসরায়েলের আক্রমণে মারা গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি গাজার বেসামরিক জনগণের ক্ষয়ক্ষতি এবং সাহায্যের প্রবাহ বন্ধ হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গাজার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, যেখানে বাইডেন প্রশাসনও ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে কিছু সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের মে মাসে গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের অমানবিক অভিযান শুরু হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২,০০০ পাউন্ড এবং ৫০০ পাউন্ড বোমার একটি চালান পাঠানো স্থগিত করেছিল।
৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির নতুন প্রস্তাব বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির শেষ কার্যাবলীর মধ্যে একটি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এবং মানবিক সংকটের কারণে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাইডেন প্রশাসন চাপের মুখে পড়েছে। ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা এবং তরুণদের একটি অংশ ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের জন্য আরও জবাবদিহিতা দাবি করছেন।
এই ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক উপস্থিতির কৌশলগত অবস্থান প্রদর্শন করে। বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে যে, তারা মানবিক বিষয়গুলিতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অপারেশনের জন্য প্রকাশ্য সতর্কতা এবং অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব মার্কিন প্রশাসনের সংবেদনশীল অবস্থানকে প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাবিত ৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনকে ব্যক্ত করে, একই সঙ্গে বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক জটিলতাগুলোকেও তুলে ধরে। বাইডেন প্রশাসন যখন অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তখন সামরিক সহায়তা এবং মানবিক উদ্বেগের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কংগ্রেসের অনুমোদন এই অস্ত্র চুক্তির ভবিষ্যত এবং বাইডেন প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।