রবিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি হবে ‘জাতির নবজন্মের মহোৎসব।’

আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে অধ্যাপক ইউনূস এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “শুরুতে যখন কমিশনের ধারণা এসেছে, আমি নিশ্চিত ছিলাম না এটি সফল হবে কি না। কিন্তু আজ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর আপনাদের আলোচনায় এবং সিদ্ধান্তে আমি অভিভূত হয়েছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কমিশনের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোর জন্যও অনুসরণযোগ্য হবে। “এটি শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নয়, সারা দুনিয়া লক্ষ্য করবে আমরা কিভাবে সমস্যার সমাধান করেছি। জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই। যে পথে আমরা শুরু করেছি, সেই পথ থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। এই সমতায় আমাদের আসতেই হবে। এটাই ছাত্র-জনতার দেওয়া সুযোগ, যেখান থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।”

নির্বাচনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা বারবার বলেছি—ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই। এটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির সত্যিকার নবজন্ম।”

অধ্যাপক ইউনূস সতর্ক করে বলেন, বিভাজন বা দ্বিমতের কোনো স্থান নেই। “যখন ঐকমত্যে পৌঁছাবো, তখনই নির্বাচন সার্থক হবে। আমাদের হাতে এখন আলাদিনের প্রদীপের মতো সুযোগ এসেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সেই শক্তি এনে দিয়েছে। আমরা চাইলে ছোটখাটো বিষয় চাইতে পারি, আবার চাইলে পুরো জাতিকে নতুনভাবে গড়তে পারি। এই সুযোগ একবারই এসেছে, আর পুনরায় আসবে না।”

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “এত বড় কাজ আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না। তাই ধৈর্য ধরে আমাদের এগোতে হবে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত কাজ হলো—কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই মহোৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি, এখন শুধু সাইনবোর্ড বসানো বাকি। পথ ঠিক আছে, গন্তব্য পরিষ্কার। এই নির্বাচন হবে উৎসবের নির্বাচন, দেশের শান্তি ও নতুন যাত্রার সূচনা। আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো সেই সব পথঘাট বন্ধ করা—যাতে কোনো স্বৈরাচার ফিরে না আসে। এজন্য সবাইকে একমত হতে হবে।”

কমিশনের কাজকে অধ্যাপক ইউনূস অভূতপূর্ব অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আপনারা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন। এখন শুধু এটিকে নিখুঁতভাবে সমাপ্ত করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই নতুন জাতির জন্ম ঘটবে। এবার আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঐকমত্যের এই পথেই আমরা এগোবো, নির্বাচন সফল করব এবং জাতি হিসেবে মহাউৎসবের যাত্রা শুরু করব।”

বৈঠকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এবং এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার।

Share.
Exit mobile version