দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত, সেই সুযোগও রয়েছে। আমরাও ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব। ট্রাইব্যুনালের কাছে এখন যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এসেছে। শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণ প্রতিরোধ করে তাকে উৎখাত করেছে। ফলে এটি আওয়ামী লীগের সংঘটিত অপরাধ। তাই দল হিসেবে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।”
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার পর আজ নাহিদ ইসলামের জেরা শেষ হয়।
এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস.এইচ. তামিম শুনানি পরিচালনা করেন। সঙ্গে অন্যান্য প্রসিকিউটরও উপস্থিত ছিলেন। আসামিদের মধ্যে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করলে সেটি মঞ্জুর হয় সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের। পরে মামলার ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে তিনি জবানবন্দি দেন।
এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা চলছে। এর একটি আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে গুম ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে এবং অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং সরকারের অনুগত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে ও নথিবদ্ধ হয়। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অভিযোগের বিচার চলছে।
