সোমবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৫

প্রকাশের এক শতাব্দী পরও এফ. স্কট ফিটজেরাল্ডের লেখা দ্য গ্রেট গ্যাটসবি বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা উপন্যাসগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। ১৯২৫ সালের এপ্রিলে প্রথম প্রকাশিত এই বইটি প্রায়ই ঝলমলে পার্টি, বিলাসিতা ও গ্ল্যামারের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে অনেক গভীর ও জটিল বাস্তবতা। জে গ্যাটসবি চরিত্রটি ‘জ্যাজ যুগ’-এর প্রতীক হলেও তিনি কেবল বিলাসী আয়োজক নন, ছিলেন একজন অবৈধ মদ ব্যবসায়ী এবং আমেরিকান ড্রিমের সীমাবদ্ধতার প্রতীকও। তার মৃত্যু যেমন অর্থহীন, তেমনি নির্মম।

প্রকাশের সময়ই বইটি ভুলভাবে বোঝা হয়েছিল। ফিটজেরাল্ড বন্ধু এডমুন্ড উইলসনকে জানান, কোনো সমালোচকই বইয়ের আসল বিষয় ধরতে পারেননি। ইডিথ হোয়ার্টনের মতো লেখকরা প্রশংসা করলেও জনপ্রিয় সমালোচকেরা এটিকে অপরাধকাহিনি হিসেবে পড়েন। নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড তখন শিরোনাম দিয়েছিল, “ফিটজেরাল্ডের সর্বশেষ বই ব্যর্থ।” বিক্রিও ছিল হতাশাজনক। ১৯৪০ সালে লেখকের মৃত্যুর সময় দ্বিতীয় মুদ্রণের কপিও বিক্রি হয়নি।

তবে ভাগ্য বদলায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, যখন মার্কিন সেনাদের জন্য বিশেষ সংস্করণে ১ লাখ ৫৫ হাজার কপি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকান ড্রিমের উত্থানের সঙ্গে বইটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে, আর ১৯৬০-এর দশকে এটি পাঠ্যপুস্তক হয়ে ওঠে। পরে হলিউড অভিযোজন বইটিকে বিশ্ব সংস্কৃতিতে জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৭৭ সালে “গ্যাটসবিয়েস্ক” শব্দের প্রচলন শুরু হয়, আর ২০১৩ সালে বাজ লুহরমানের চলচ্চিত্র এটিকে আবারও আলোচনায় আনে। কপিরাইটের মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হওয়ায় নতুন মিউজিক্যাল, নাটক, গ্রাফিক নভেল ও বই প্রকাশিত হচ্ছে একের পর এক।

গ্যাটসবিকে ঘিরে নতুন ব্যাখ্যার একটি হলো মাইকেল ফ্যারিস স্মিথের উপন্যাস নিক, যেখানে উপন্যাসের বর্ণনাকারী নিক ক্যারাওয়ের ব্যাকস্টোরি তুলে ধরা হয়েছে। স্মিথ মনে করেন, গ্যাটসবির স্থায়ী গুরুত্ব হয়তো ঝলমলে পার্টিতে নয়, বরং সেই অস্থির অনুভূতিতে—যে কোনো মুহূর্তে সবকিছু ভেঙে পড়তে পারে।

ওয়েলেসলি কলেজের অধ্যাপক উইলিয়াম কেইনের মতে, নিক ক্যারাওয়ে চরিত্রটি বোঝা ছাড়া দ্য গ্রেট গ্যাটসবির সমৃদ্ধি ধরা যায় না। তিনি বলেন, ফিটজেরাল্ড সচেতনভাবেই নিককে দিয়ে গল্প বলিয়েছেন, যাতে পাঠক গ্যাটসবিকে প্রশংসা ও সমালোচনার মিশ্র দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারে।

তবে উপন্যাসটির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বর্ণবৈষম্যমূলক শব্দ ব্যবহার এবং নারী চরিত্রের একমাত্রিক উপস্থাপনা আজকের প্রেক্ষাপটে সমালোচিত। আধুনিক লেখকেরা তাই নতুনভাবে কাহিনি নির্মাণ করছেন, যেমন জেন ক্রাউদারের গ্যাটসবি যেখানে চরিত্রগুলোর লিঙ্গ বদলানো হয়েছে, কিংবা ক্লেয়ার অ্যান্ডারসন-হুইলারের দ্য গ্যাটসবি গ্যাম্বিট, যেখানে গ্যাটসবির এক কল্পিত বোনের গল্প বলা হয়েছে।

শত বছর পরও দ্য গ্রেট গ্যাটসবি পাঠকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন বয়সে ভিন্ন অর্থে ধরা দেয়। সাহিত্যবিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধু আমেরিকান ড্রিমের গল্প নয়, বরং গভীর সাহিত্যিক অভিজ্ঞতা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নতুনভাবে আবিষ্কৃত হবে।

Share.
Exit mobile version