বুধবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৫

শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। ফলে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পেরে ফিরে যায়।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কাসেম মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জানান, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর)ও পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী ১১তম গ্রেডসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর করা, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। তাদের দাবিগুলো হলো সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ, বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ–পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন–সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।

দাবির বিষয়ে তাঁরা প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সন্তোষজনক উত্তর পাননি। তাদের লাগাতার কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিলে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন।

তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক আদেশে জানিয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি সকল নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল–অ্যান্ড–কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক, নির্বাচনী ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। আদেশ অনুসারে বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর, নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর এবং জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বা কর্মকর্তার শৈথিল্য বা অনিয়ম ধরা পড়লে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের সতর্কবার্তার পরও কর্মবিরতি থেকে সরে আসেননি সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের শিক্ষকরা। ফলে দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরুই করা যায়নি। মঙ্গলবারও (০২ ডিসেম্বর) কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বার্ষিক পরীক্ষা ৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ১৫ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে গতকাল ও আজকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে, তা–ও অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি. আর. আবরার বলেছেন, ‘মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনের নামে যা করছেন, তা সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনাদের কিন্তু তৈরি থাকতে হবে।’

Share.
Exit mobile version