মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তারা অধিকার নিয়ে দেশে ফিরতে প্রস্তুত। সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ব্রিফিংকালে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর বিষয়ে জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও ড. খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, “সংলাপের প্রথম দিনে রোহিঙ্গারা তাদের অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও প্রত্যাশা সরাসরি তুলে ধরেছেন। এটি ঐতিহাসিক সুযোগ ছিল, কারণ প্রথমবার তারা একই ছাদের নিচে বসে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পেরেছেন। আসন্ন জাতিসংঘ সম্মেলনে এই ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর তুলে ধরা এবং প্রতিবেশী দেশসহ আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা আমাদের মূল লক্ষ্য।”
ড. খলিলুর রহমান আরও জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সামনে রেখে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনার মূল দিক
ব্রিফিংয়ে ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন:
১. রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর: সমস্যার সমাধানে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
২. প্রত্যাবাসন: মর্যাদাসম্পন্ন ও নিরাপদভাবে নিজ ভূমিতে ফেরার দাবি।
৩. আন্তর্জাতিক সহায়তা: খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় সেবায় নিশ্চয়তা আনা।
৪. আস্থা বৃদ্ধি: বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস ও সংলাপের প্রসার।
৫. মিয়ানমারের অপরাধ: আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
৬. জবাবদিহিতা: রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সক্রিয় রয়েছে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বও সমর্থন দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদাররা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সংলাপে উপস্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশেষজ্ঞ ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সমস্যার সমাধানে নানা প্রস্তাবনা দেন। আলোচ্য বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শেষে ড. খলিলুর রহমান বলেন, “মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি এবং সীমান্তে সৃষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি উইংয়ের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান।
সংলাপটি আজ শেষ হবে।