বাংলাদেশ সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকে যতটা দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আমরা কাজ করছি।” তিনি আরও বলেন যে, আইনগত প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে, তবে সরকার এই বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে ভারত সরকারের সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যেই নোট ভারবাল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, “শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহতা ছিল নজিরবিহীন। গত ১৫ বছরে প্রায় ৩,৫০০ মানুষ গুম হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষকে আইনবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবে ১,৫০০ ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। ৬ বছরের শিশু আরাফাতকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”
শাপলা চত্বরে নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড এবং মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর পর ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও তিনি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে সরকারের প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, “শেখ হাসিনা কী পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন তা জাতি জানতে চায়। প্রতিবছর প্রায় ১,৬০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। ব্যাংক লুটের মতো অপরাধের মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন তার একজন পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সেই পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬২৬ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, “৫০ থেকে ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা অধিকাংশই মিথ্যা। এতে অসংখ্য পরিবার অত্যাচার এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে।”
শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা বর্তমান সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সরকার দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
