বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনকালে হওয়া হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়ে তিনি বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি ও ক্ষমা প্রার্থনা

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সাবেক আইজিপি বলেন, “আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে যদি সত্য উদ্ঘাটিত হয়, আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দেন তবে জীবনের বাকিটা সময় কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।”

তিনি আরও জানান, পুলিশের চাকরিজীবনে তার বিরুদ্ধে কখনো অভিযোগ আসেনি। তবে শেষ পর্যায়ে এমন এক ভয়াবহ গণহত্যা তার দায়িত্বকালে ঘটায় তিনি অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হতে সত্য স্বীকার করছেন। শহীদ পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল-১। পরে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য উদঘাটনে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান মামুন, যা আদালত মঞ্জুর করে।

আজ মামলার একাদশ দিনে তিনি ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন। এর আগে আরও ৩৫ জন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসিকিউশন ও ডিফেন্সের উপস্থিতি

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক আইজিপির পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

গণঅভ্যুত্থান হত্যাকাণ্ড মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম ও খুনের অভিযোগে দায়ের করা হয়। অন্য মামলাটি রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশের বিরুদ্ধে একাধিক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হয় । এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলছে।

Share.
Exit mobile version