• ট্রাম্প প্রশাসনকে বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ পরিশোধে বাধ্য করার নিম্ন আদালতের আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
  • ট্রাম্প প্রশাসন ৯০% বৈদেশিক সাহায্য চুক্তি বাতিল করেছে, ফলে কমবে ৫৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা। 
  • আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কিছু অর্থ পরিশোধ শুরু হলেও, সম্পূর্ণ পরিশোধ হতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।
  • এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাগুলো আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক অন্তর্বর্তী আদেশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে বৈদেশিক সাহায্যের অর্থ পরিশোধে বাধ্য করার নিম্ন আদালতের নির্দেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। ওয়াশিংটনের জেলা আদালতের বিচারক আমির আলী এই অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বুধবার রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ট্রাম্প প্রশাসন আপাতত অর্থ পরিশোধে বাধ্য নয়।

ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে জানিয়েছে, তারা বৈদেশিক সাহায্যের অধিকাংশ চুক্তি বাতিল করেছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ সম্ভব নয়। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএইড (USAID))-এর ৯০% সাহায্য চুক্তি বাতিল করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ। 

এই অর্থ তহবিল স্থগিত হওয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি সাহায্য সংস্থা মামলা করেছিল। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন অবৈধভাবে সাহায্যের অর্থ আটকে রেখেছে, যদিও আদালত ইতোমধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। বিচারক আমির আলী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রশাসনকে অর্থ ছাড় করার নির্দেশ দিলেও, ট্রাম্প প্রশাসন তা মানেনি। সর্বশেষ আদালত বুধবার রাতের মধ্যে অর্থ পরিশোধের চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল।

প্রশাসনের আইনজীবীরা দাবি করেন, সরকার চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে নীতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। নতুন নথি অনুযায়ী, ইউএসএইড (USAID) ইতোমধ্যে ৫,৮০০টির বেশি চুক্তি বাতিল করেছে এবং ৫০০টির বেশি বহাল রেখেছে। পররাষ্ট্র দপ্তর ৪,১০০ চুক্তি বাতিল করে ২,৭০০টি বহাল রেখেছে। বাতিলকৃত চুক্তির অনেকগুলো বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি (DEI) সংক্রান্ত, যা ট্রাম্প প্রশাসন অপ্রয়োজনীয় মনে করছে।

তবে আদালতের আদেশ মেনে কিছু সংস্থাকে অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও নির্দেশ দিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারির আগে সম্পন্ন হওয়া কাজের জন্য বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করতে হবে, যদিও পুরো অর্থ পরিশোধে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইউএসএইড (USAID) প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট বৈদেশিক সহায়তার ৬০% পরিচালনা করে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি প্রায় ৪৩.৭৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সংস্থার প্রায় ১০,০০০ কর্মী বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে সহায়তা প্রদান করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে সংস্থার অধিকাংশ কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে এবং ১,৬০০টি পদ বাতিল করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাগুলো দাবি করছে, ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে কংগ্রেস অনুমোদিত অর্থ আটকে রেখেছে। মামলার অন্যতম আইনজীবী অ্যালিসন জিভ বলেন, “সরকার মানবিক সহায়তা বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে, যা অভূতপূর্ব।”

বিচারক আমির আলী ও অন্য এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনকে বারবার আদালতের নির্দেশ মানার কথা বললেও, প্রশাসন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সাময়িক স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও, সাহায্য সংস্থাগুলো আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

Share.
সম্পাদক ও প্রকাশক: INFORMER365TEAM | Email: info@informer365.com
© 2025 Informer 365 বাংলা | Powered by Friday Pixels.
Exit mobile version