• ঢাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে নগরবাসী আতঙ্কিত।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগে অপরাধ জগতে আধিপত্য বিস্তার করছে কিশোর গ্যাং।
  • গোয়েন্দা তথ্যে ঢাকায় ৫০টির মতো সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
  • সংঘাত-সংঘর্ষ, ছিনতাই, খুন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত কিশোররা।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং কালচারের বিস্তার নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। দিনের আলোতেই সশস্ত্র মহড়া, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা এবং ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে, যা পুলিশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীদের বেশিরভাগের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তবে গ্যাং লিডারদের বয়স সাধারণত ২০ বছরের বেশি।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা অন্তত ৫০টি, যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিশেষ করে উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় এসব গ্যাংয়ের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এই কিশোর গ্যাং সদস্যরা আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে ভিডিও আপলোড, সংঘর্ষের মুহূর্তের ফুটেজ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, ঢাকায় ১২৭টি কিশোর গ্যাং থাকার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে সক্রিয় গ্যাংয়ের সংখ্যা ৫০টির কাছাকাছি। এর মধ্যে উত্তরায় ২৩টি, মোহাম্মদপুরে ১০টির বেশি এবং মিরপুরে একাধিক গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, এসব গ্যাংয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এক সময় যারা রাজনৈতিক নেতাদের মদদে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত, তারা এখন পুরোপুরি স্বাধীনভাবে সংঘবদ্ধ অপরাধে লিপ্ত হয়েছে।

সরকার পতনের পর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রও এসব কিশোর গ্যাংয়ের হাতে রয়েছে বলে ধারণা করছে গোয়েন্দারা। আধুনিক ধারালো অস্ত্র যেমন চাপাতি, কিরিচ, বার্মিজ চাকুও এদের কাছে দেখা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যের প্রমাণ মিলেছে। গত মাসে রায়েরবাজারে এক কিশোরকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। মোহাম্মদপুরের আসাদ এভিনিউতে রাতের বেলা এক পথচারীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করা হয়।

রাজধানীর হাতিরঝিলে কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের গুলিবিনিময়ের ঘটনায় নিরীহ এক কলা ব্যবসায়ী ও এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশই কিশোর। প্রায় ২০ হাজারের বেশি কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

গবেষকদের মতে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহজলভ্যতার কারণে কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোর মতো প্ল্যাটফর্মে গোপন গ্রুপ তৈরি করে তারা সংঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটিত করছে। কিশোরদের অপরাধের মূল কারণ হিসেবে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের অভাব, দারিদ্র্য, শিক্ষাগত ব্যর্থতা, সামাজিক প্রভাব এবং গ্যাং সংস্কৃতির প্রতি আকর্ষণকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, কিশোর গ্যাং দমন করতে হলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান যথেষ্ট নয়, বরং সামাজিক ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। এছাড়া এসব কিশোরদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ কার্যক্রম নেওয়া দরকার। পুলিশের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করা না গেলে ভবিষ্যতে এটি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Share.
সম্পাদক ও প্রকাশক: INFORMER365TEAM | Email: info@informer365.com
© 2025 Informer 365 বাংলা | Powered by Friday Pixels.
Exit mobile version