২০২৩ সালে ভারতের মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা মে মাসের ৩ তারিখে শুরু হয়। সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল রাজ্যের সংখ্যাগুরু মৈতেই সম্প্রদায়ের তপশীলি উপজাতির মর্যাদা পাওয়ার জন্য সরকারিভাবে প্রস্তাব করা, যা মণিপুরের কুকি জনজাতির মধ্যে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দেয়। মৈতেইরা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ, আর কুকি জনজাতি মূলত খ্রিষ্টান এবং সংখ্যালঘু।

কুকিরা আশঙ্কা করেছিলেন যে, যদি মৈতেইদের তপশীলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়, তবে তারা সংরক্ষণ সুবিধা পাবে এবং রাজনৈতিক বা সরকারি কাজে আরও বেশি সুযোগ লাভ করবে। এর ফলে, মৈতেইদের জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে জমি দখল করার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, যা কুকি সম্প্রদায়ের কাছে এক বড় ধরনের হুমকি হিসেবে perceived হয়েছিল।

সংঘর্ষ শুরুর পর, মণিপুরের পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেইতেই অধ্যুষিত অঞ্চল, যার মধ্যে রাজ্য রাজধানী ইম্ফলও অন্তর্ভুক্ত, এবং কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি হয়ে যায়। এই সীমারেখা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অস্থিরতার একটি দৃশ্যমান প্রতিফলন।

এই সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ১৭০ ছাড়িয়ে গেছে এবং হাজার হাজার মানুষ ভিটেহারা হয়েছেন। পুরো রাজ্যে সহিংসতা ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে নারীদের গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সবচেয়ে শোকাবহ। এমন ঘটনা মণিপুরের মতো রাজ্যে, যেখানে নারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান রয়েছে, তা বিরল।

সংঘর্ষের শুরুতেই বিপুল পরিমাণে পুলিশি অস্ত্র লুট হয়ে যায়, এবং প্রতিপক্ষের বাড়িঘর, গাড়ি, এমনকি গ্রাম পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়, যাতে সহিংসতার গুজব ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমশ বেড়ে চলা দ্বন্দ্বের মধ্যে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীও কর্মশক্তি পাঠায়, তবে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা তৈরি হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। দুই সম্প্রদায়ই নিজেদের এলাকার সুরক্ষার জন্য সশস্ত্র চেকপোস্ট স্থাপন করে, এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি মাঝে মাঝে এই সংঘর্ষের মধ্যবর্তী ভূমিকা পালন করতে থাকে।

বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে জাতিগত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে, রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, এই সহিংসতা শুধু মণিপুরের নয়, বরং পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে এখন এই সংকটের সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে মণিপুরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য একটি পথ তৈরি করা জরুরি।

 

Share.
সম্পাদক ও প্রকাশক: INFORMER365TEAM | Email: info@informer365.com
© 2025 Informer 365 বাংলা | Powered by Friday Pixels.
Exit mobile version